2007年5月6日日曜日

রিভিউ-১: বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এনাটমি

বিশ্বক্রিকেটের আরেক দুর্গের পতন ঘটল কাল বাঙালী সেনাদের হাতে। ঝড়ে-বক বা ফ্লুক বলার কিছুই নেই, পুরো ম্যাচে এমন কিছু ঘটেনি যে হঠাৎ করে খেলার মোড় ঘুরে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে যাবার পর যেটা দরকার ছিল, তা হলো ফাইটিং স্কোর। সেটা তারা করতে পেরেছিল, কারণ সকালের স্লো পিচের সুবিধা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের ইনিংসকে ছোট স্কোরে আটকে রাখতে পারেনি। ক্যারিবিয়ায় দ্্বিতীয় ইনিংসে পিচ স্লো হবে, কাজেই স্পিনারদের ভালভাবে ব্যাবহার করতে পারলে ম্যাচের জয় বের করে আনা যে সম্ভব সেটা বাংলাদেশের 250 এর ইনিংসের উপর ভিত্তি করে ভাবা যাচ্ছিল। বাংলাদেশ অধিনায়কের জন্য যেটা সবচেয়ে সুখকর ছিল তা হলো রফিক-রাজ্জাকের বল বেশ ভাল ঘুরেছে। প্রতিপক্ষের বাঘা-বাঘা ব্যাটসম্যানরাও বেশ সমীহ করে খেলেছে এই দুই স্পিনারকে। কাজেই মিডিয়ার 'আপসেট' বলে আপসেট হবার কিছু নেই।

কিছুদিন আগেও প্রথম 30 রানের মধ্যে 3 উইকেট পড়ে যাওয়াটা ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। 3 উইকেট পড়ার পর একটু ধতস্থ হয়, 60 এর দিকে 4 নম্বরটা পড়ে। তারপর 100 এর মধ্যে 6 টা শেষ। এরপর খালেদ মাসুদ নেমে একটু খেলতেন, সেখানে তার রানিং বিটউইন উইকেটে ভাল দক্ষতার সাথে সাথে প্রতিপক্ষের একটু গা ছাড়া ভাবটাও ফ্যাক্টর হতো। তাও 130-40 এর দিকে যখন 8 টা উইটেট নেই হয়ে যেত, তখন রফিক ব্যাট হাতে বাড়ি দেবে কি দেবেনা তার উপর নির্ভর করত বাংলাদেশ কি 150 এর ঘরে থেমে যাবে নাকি 180-190 এর মতো করতে পারবে। তো এই স্কোরটা নিয়ে যখন প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে ডাকা হয়, তখন খেলোয়াড়দের মধ্যে মনোবল বলে কিছু থাকেনা। ফাইটিং স্পিরিট নিয়ে ফিলডিং করা যায়না, খেলোয়াড়রাও মানুষ। জেতার চান্স খুব কম থাকলে সেখানে শরীর উজাড় করে খাটা সম্ভব না। বোলাররাও প্ল্যানমতো বোলিং করতে পারেনা।

বাংলাদেশের এই বড়জোর 180-190 এর আশেপাশে ঘোরাফেরা করার পেছনে দুটো বড় কারণ ছিল।
1. ওপেনিং জুটিটা 10-15 এর মধ্যেই চলে যেত।
2. বড় পার্টনারশীপ নেই।

ওপেনিং জুটিতে ভাল স্ট্রোকসমৃদ্ধ শাহরিয়ার নাফিস দূর্বল দলের জন্য ভাল, কারণ শুরুথেকেই পেটানো যায়। পরপর কয়েকটা ভাল লাইন-লেংথের বল আসেনা যেহেতু, তাই তার খুবই আনঅর্থডক্স ব্যাটিং দিয়েও ফ্লাইং স্টার্ট টাইপের কিছু শুরু করা যায়। বিশ্বকাপের আগের কয়েক সিরিজ মেইনলি জিম্বাবুয়ে-কেনিয়ার সাথে খেলা বাংলাদেশ তাই নাফিস-ইলু্যশানে ভুগছিল খুব বেশি। তবে ওপেনিং ব্যাটসম্যান যদি টপ পেসবলে ক্রসব্যাটে খেলে, তাহলে সে বেশীক্ষণ টিকবে এটা আশা করা ঠিকন আর এখানেই শাহরিয়ার নাফিসকে নিয়ে সমস্যা। কারণ হলো আমাদের ওপেনিংয়ে একটা স্ট্যাবল পার্টনারশীপ দরকার। বিশেষ করে যখন দল আগে ব্যাট করবে, কারণ তানাহলে ইনিংস খুব সহজেই দুমড়ে-মুচড়ে যায় -- সেটা আমরা অনেক দেখেছি।

আরেকটা বড় ব্যাপার হলো বিগ পার্টনারশিপ। বিগ বলতে এখানে শুধু রানের অংকেই বুঝাচ্ছিনা, ওভারের হিসেবেও। আমার ব্যাক্তিগত স্পেকুলেশানে এটা হওয়া উচিৎ 15 ওভারের বেশী সময় ধরে, এবং রান আসা উচিৎ 75 এর বেশী। খেয়াল করে দেখবেন ওয়ানডেতে এরকম একটা পার্টনারশিপ হলেই হয়। পাকিস্তানের সাথে বিদ্যুৎ-অপি, কার্ডিফে হাবিবুল-আশরাফুলের সেই লম্বা একঘেয়ে জুটি, নিউজিল্যান্ডের সাথে তামিম-জাভেদ, ভারতের সাথে সাকিব-মুশফিক, কাল দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে আশরাফুল -আফতাব --এরকম একটা জুটিই প্রতিপক্ষের সমীহ তুলে নিতে পারে। সমীহ তুলে নিলেই হলো, রান আসবেই। আপনি চিন্তা করুন, যতই মুখে বলুক বাংলাদেশের সাথে খেলতে নামলে এখনও বড় দলগুলোর সব বোলাররাই, তককে তককে থাকে 'আজ একটা স্পেলই করব'। সেই বোলাররা যখন 15-20 ওভার ধরে দেখে কেউ আউট হচ্ছেনা, তখন ধৈর্যচু্যতিটা অবশ্যম্ভাবী। কারণ, তারাও মানুষ; যন্ত্র না! বোলারদের একবার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে পারলেই হলো। বোলারদের সম্পর্কে বলা হয় (বিশেষ করে যখন গ্লেন ম্যাকগ্রা বিশ্লেষণ হয় তখন) লাইনে রেখে লেংথ একটু বাড়িয়ে কমিয়ে গুড লাইন-লেংথ বল ফেলে যাও একটার পর একটা। ব্যাটসম্যান একসময় খেলতে যাবেই, আর তখনই হাতে উইকেট। ব্যাটসম্যানদের সম্পর্কেও বলা যায়, টুকটাক এক করে নিতে থাক, যাস্ট উইকেটটা দিয়ে এসনা। বোলাররা একটু পরে লাইন-লেংথ হারাবেই। এই ধৈর্যের খেলায় কে আগে হাল ছেড়ে দেয়, সেটাই ক্রিকেট। অস্ট্রেলিয়া দলের এই জায়গাটা অসাধারণ, 60 রানে 6 উইকেট গেলেও দেখা যায় 7ম জুটিতে 150-60 তুলে ফেলল।

তো, বাংলাদেশ যেদিন উপরের দুটো কন্ডিশান পূরণ করে সেদিন জেতে বা জেতার খুব কাছে চলে যায়। সেজন্যই ওপেনার জাভেদ ওমরের ব্যাটিং স্টাইল বা প্রতিভা কোনটাই আমার পছন্দ না হবার পরও মনে হয় থাকুক আরও কিছুদিন, ও রান না নিয়ে একপ্রান্ত আগলে ধরে রাখলেই হলো। তবে ঢাকার লীগে এবার জুনায়েদ আর ইমতিয়াজ নামে দুজন ওপেনার (মোহামেডানের) খুব ভাল করেছে, ওদের ব্যাটিং দেখেছি -- বেশ পরিণত। 'এ' দলে চান্স দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।
তামিম খুবই ট্যালেন্টেড, ব্যাটিংয়ের সময় যে বডি মুভমেন্ট সেটাতে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অনেকদিন পর আরেকজনকে পেল বাংলাদেশ, এবং তামিমের স্ট্রোক অনেক অনেক ভাল। দরকার টেম্পারমেন্ট, আর বল বিচার করে খেলার ক্ষমতা। যেভাবে সে যখন তখন ডাউন দ্য উইকেটে এসে ব্যাট ঘুরায়, আমার সন্দেহ সে বল ছোঁড়ার সময় বোলারের হাতের দিকে আসলে খেয়াল করে কিনা। আরেকটা হলো মোটামুটি প্রতি তিন বলে একবার ওয়াইলড স্ম্যাশ চালায়, বল লেগে গেলে তো গেলই আর না গেলে কপালই ভরসা। এজায়গাগুলো মেরামত করলে তামিম বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হতে পারবে, কোন সন্দেহ নেই।
ওয়ান ডাউনে আফতাব আসে সাধারণত, তবে তার লফটেড শট খেলার ঝোঁক খুব বেশী। তাই একটু স্লো পিচ বা বড় মাঠ হলে তার কাছে লম্বা ইনিংস তো দূরের কথা ভাল স্কোর আশা না করাই ভাল। অথচ, এই ছেলেটার রানিং বিটউইন উইকেট অসাধারণ, খুবই এ্যাথলেটিক। তাকে শুধুশুধু পাওয়ারপ্লেতে গিয়ে পিটিয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। গেমপ্ল্যান হিসেবে ভাল হতে পারে, তবে আফতাবের এরকম এক্সক্লুসিভ ব্যাবহার একটা সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারের ইতি টানবে খুব তাড়াতাড়ি। তবে এখনকার স্টাইলে 1ম জুটি খুব দ্্রুত পড়ে গেলে বা 15 ওভারের বেশী টিকে গেলে আফতাবকে বেশ পরের অর্ডারে নামানোই ভাল। কারণ, দ্্রুত পড়ে গেলে পরের জুটি টেকাতে হবে, বেশী টিকে গেলে ধারাবাহিকতা নষ্ট করার মানে হয়না। পাওয়ার প্লেতে আফতাব লফটেড শট খেলবেই। আর আজকালকার ক্রিকেট ফিলডাররা এত পাকা যে ভেতরের বৃত্তের বেশ বাইরে ভেসে ওঠা বলও ঠিক দৌড়ে ধরে ফেলে। আফতাব তুলে দেয়ও সেরকম একদম আকাশচুম্বি, ফিলডারের দৌড়ানোর মতো অনেক সময় থাকে। নাদিফ চৌধুরী দলে ঠিকমতো ঢুকে গেলে আফতাবের অবস্থান আসলেই নড়বড়ে হয়ে যাবে, তার এখন নিজের স্বার্থেই লম্বা, স্টিডি ইনিংসে অভ্যস্ত হওয়া উচিৎ। বিগ হিট করে দর্শকদের সে যেভাবে এন্টারটেইন করে সেটা ছোট দলগুলোর জন্য রেখে দেয়াই ভাল।
সাকিবের মধ্যে আমি সবচেয়ে ভাল সম্ভাবন াদেখি, পরিপূর্ন অলরাউন্ডার। রানিং বিটউইন উইকেট খুবই ভাল, বল দেখে খেলে তাই খুব ভয়াবহ ডেলিভারি না হলে প্রতি বলেই একরান নেয়ার ক্ষমতা রাখে আর তার সাথে বেশ ভাল স্ট্রোক। পারফেক্ট মিডল অর্ডার, সাকিবকে যাস্ট বলে দিলেই হয় প্রথম 30 রান পর্যন্ত বিগ হিটে না যাওয়ার জন্য।
আশরাফুল জুয়ার কার্ড, তার একটা দিন আসে যেদিন তার ব্যাটবলের টাইমিং মিলে যায়। সেদিন সে অপ্রতিরোধ্য। অন্যান্যদিন মিসটাইমড শটে ক্যাচ দিয়ে বাড়ি ফিরে। আশরাফুল খেলার মাঝে যেভাবে বারবার উপরের দিকে তাকায়, মনেহয় ঠিক টাইমিংটা প্রর্থনা করছে। প্রার্থনা করুক, তবে আমার মনে হয় যেদিন টাইমিং ঠিক হয়না সেদিন অবসেশানে না ভুগে আরেকটু সময় নিয়ে টাইমিং মিলানো উচিৎ। ফুটওয়ার্কও স্লাইডলি এ্যাডজাস্ট করা উচিৎ। সে সাধারণত একটা বিগ হিটে গিয়ে টাইমিংয়ের রিদম মেলাতে চায়। এটা সবসময় কাজ করেনা।
হাবিবুল বাশার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। তবে অধিনায়কত্বের চাপে তিনি সেই ফর্ম ধরে রাখতে পারেননি। তার সেই স্ট্রোক প্লে এবার দেখা যায়নি, তাকে প্রতি ম্যাচেই খুবই টেনসড মনে হয়েছে। সব খেলোয়াড়েরই ব্যাডপ্যাচ যায়, তারটা এখন যাচ্ছে। আমার মনে হয় এখন ঢালাওভাবে সমালোচনা না করে তার পাশে অন্যদের দাঁড়ানো উচিৎ। কারণ, বিগ পার্টনারশিপ বলে যে জিনিসটা অন্তত একবার দরকার প্রতি ইনিংসে, সেটার জন্য হাবিবুল-সাকিব-আশরাফুল-আফতাব এদের উপর ভরসা করা যায়। আশা করি শীঘ্রই তিনি ফর্ম ফিরে পাবেন। তবে নিঃসন্দেহে দলের খুব ভাল ক্যাপ্টেন তিনি, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সাথে চমৎকার ম্যান-টু-ম্যান আন্ডার্স্ট্যান্ডিং রয়েছে তার। আমি তাকে আরও কিছুদিন বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে দেখার পক্ষে।
মুশফিকুর রহিমকে এখন থেকেই দলে রেখে পেলে পেলে বড় করতে হবে, ্রিীলংকার মডেল হতে পারে। কীপার কাম ভাল ব্যাটসম্যান। খালেদ মাসুদের যোগ্য উত্তরসুরী। তবে সে খালেদ মাসুদের চেয়ে অনেক বড় বড় ইনিংস উপহার দেবে দলকে ভবিষ্যতে। ভীষন মেধাবী, কাল রাজ্জাকের বলের ঘুর্নিতে যখনই প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা পরাভূত হচ্ছিল, তখনই যেন মজা পেয়ে খিকখিক করে হেসে 'গুড বল, বয়' বলে চীৎকার করছিল। এটা বেশ ট্রিকি স্লেজিং ছিল, বাংলাদেশের বাচ্চা চেহারার কীপারের ওরকম হাসি বারবার শুনলে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানের পিত্তি জ্বলে যাওয়াটা স্বাভাবিক। আর পিত্তি জ্বললে, হাতও উলটো-পালটা চলে।
রফিক-মাশরাফি বাংলাদেশ দলের বিগ এ্যাসেট; বোলিংয়ে যেমন সবসময় ভরসা করা যায়, দিন ভাল গেলে ব্যাটিংয়েও চমৎকার। টপ আর মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা যদি 44-45 ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারে ইনিংস, তাহলে রফিক বা মাশরাফির একজন জ্বলে উঠলেই তান্ডব বয়ে যাবে। সামপ্রতিককালের নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার খেলায় সেটাই দেখেছি, স্লগে 4 উইকেট হাতে থাকলে এদের একজন জলে উঠবে আশা করা যায়ই।
বোলিংয়ে সাকিব আল হাসান একটা ভাল সংযুক্তি; তেমন ভয়াবহ স্পিন না, কিন্তু দেদারসে মারার জন্য মোটেও নিরাপদ বল না। 20 থেকে 40 ওভার কাটিয়ে দেয়ার জন্য ভাল বোলার। বাংলাদেশের বোলিং এ্যাটাকে যেহেতুস্পিন একটা বিগ গেমপ্ল্যান আর আমাদের রফিক-রাজ্জাকের মতো খুব উঁচু লেভেলের দুজন স্পিনার আছে, তাই এখনকার স্টাইলটাই যথেষ্ট।
এবারের বিশ্বকাপে আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের বোলিং এ্যাটাক বড় আট দলের যেকোনটারই সমকক্ষ, যাস্ট মাশরাফি মার খেলে লাইন-লেংথ হারিয়ে ফেলে। তবে বোলারদের যে মানুষখেকো স্বভাবটা দরকার তা মাশরাফির আছে যথেষ্ট, আর বাকীটা মাথার ব্যাবহার। রাসেল চমৎকার ব্রিলিয়ান্ট বোলার, লাইন ভাল, লেংথে যদিও মাঝেমাঝে গোলমাল হয়। তবে পিচভেদে রাসেলের বল মাঝেমাঝে ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব আদর্শ বল হয়ে যায়; এখানে অবশ্য জুয়া খেলা ছাড়া কিছু করার নেই। তবে নিয়মিত বিরতিতে রাসেল আর রাজীবকে চান্স দেয়া উচিৎ, নাইলে একটাতে মরচে পড়ে যাবে। বোলিং এ্যাটাকে হাবিবুল কোন ওয়াইলড কার্ড ব্যাবহার করেননা, আসলে করতে হয়নি। কারণ গতকালই ছিল তার প্রথম চ্যালেঞ্জ, এবং খুব চমৎকারভাবে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশের বোলার আর ফিলডাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়েছে ওদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একম্যাচে 2 টা রান আউট, তাও একটা স্ট্রেট থ্রো -- আমাদের দলের ফিলডিং বেশ উঁচুমানের সেটা জন্টিরোডসও মানবেন।

আসলে, আমাদের দলটা খুবই প্রতিভাবান আর সামর্থ্যও আছে বেশ ভাল। আগে ব্যাটিং পেলে দরকার ব্যাটিংয়ে অনেক অনেক বেশী ধৈর্য্য। একটা ভাল ওপেনিং, (40 এর বেশী, 10 ওভারের বেশী খেলে) আর প্রথম 5 উইকেটের মধ্যে েকটা বড় জুটি (75 এর বেশী, 15 ওভারের বেশী)। বিশ্বের যেকোন বোলিং শক্তির বিরুদ্ধে সেটা করার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। এবং সেটা করতে পারলে দলের ফিলডিং অসাধারণ একটা রূপ ধারণ করে, খেলোয়াড়রা বুঝতে পারে আজ জেতার একটা চান্স আছে,ওরা জান দিয়ে দেয়।
আগে ফিলডিং পেলে যাস্ট এটার (বিগ ওপেনিং, বিগ পার্টনারশীপ) উলটোটা করার চেষ্টা, অর্থাৎ প্রতিপক্ষ যাতে এটা না করতে পারে তার চেষ্টা করা, তবে সেটা জেনেরালি অনেক কঠিন। সেকারণেই টসে জিতলে সবাই ব্যাটিং নেয় সাধারণত। তবে ক্যারিবিয়ার সকালের ভেজা পিচের সুবিধা নেয়ার জন্য এখানে সবাই ফিলডিং নিচ্ছে । সেক্ষেত্রে আগে ফিলডিং পেলে মাশরাফি আর রাসেলের উপর নির্ভর করে দলের অনেকটুকুই।

দুর্গ ফেলানোর বাকী আর দুটো মাত্র -- ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। খাপে খাপ মিলে গেছে। ফেলে দিক এই ক্যারিবিয়ান অপারেশানেই। হোয়াটমোরও চলে যাই চলে যাই করছেন, তবে বলব হোয়াটমোর চলে গেলেও যাতে অস্ট্রেলিয়ান কোচ আনা হয়। ওদের প্রফেশনালিজমই অন্যরকম, বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের বাকী সবটাই আছে, প্রফেশনাল এ্যাটিচিউডটা যত ভাল হবে এদল তত উপরে উঠে যাবে। তবে আমি হোয়াটমোরকে রাখার পক্ষেই। যে দেশে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয় অন্যায়ভাবে, সেদেশের 15 কোটি হাঢ়াভাতের মনের প্রায় সবটুকু সমষ্টিগত আনন্দের এই ক্রিকেটের জন্য হোয়াটমোরকে একটা বড়সড় অফার দেয়াই যায়। বিসিবির উচিৎ তাকে ধরে রাখার সবরকম চেষ্টা করা।

শুভকামনা, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অভিনন্দন।



২০০৭-০৪-০৮

৭১ এর সকল বীর সেনানীর পক্ষ থেকে: ২০০৭ এর প্রজন্মের Xদফা দাবী

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যারা সরাসরি সুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, যারা পরোক্ষভাবে নিয়েছেন, যারা দেশ স্বাধীন হোক চেয়েছেন এবং অন্তত যারা দেশ স্বাধীন হওয়ায় খুশী হয়েছেন,
তাদের সবার পক্ষ থেকে এই X দফা দাবী ...

আপনার দাবী/দাবীপূরণের সম্ভাব্য উপায় তুলে ধরুন, গলা মেলান।

১. সকল রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও অন্যান্য বাঙালী বা বাংলাদেশ ভূখন্ডে বসবাসরত গোষ্ঠী, যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে খুন, গুম, ধর্ষন, আগুন লাগানো বা অন্যান্য যেকোন নিপীড়নে সাহায্য করেছে, তাদের যত সদস্যকে চিন্হিত করা যায় সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।

২. শাস্তির সাথে সাথে এদেশে এদের রাজনীতি করার/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার লাইসেন্স কেড়ে নিতে হবে।

১ ও ২ এর জন্য কি করতে হবে?
ক. বিগ ফিশগুলোর বিরুদ্ধে জড়ো করা যায় এমন সব সাক্ষ্য-প্রমাণ একত্র করা ... একটু প্রচেষ্টা দিলেই যথেষ্ট জোগাড় হবে
খ. গনসচেতনতা তৈরী করা
খ-১. এলাকা (দেশে ও বিদেশে) অনুসারে ছোট ছোট সচেতনতা কমিটি গড়ে তোলা।
খ-২. ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেটে সচেতনতা গড়ে তোলা।
গ. ১ ও ২ একটা সন্তোষজনক লেভেলে গেলে মামলা করা

৩. ৭১ এর পাকিস্তানি অত্যাচারকে বিশ্বের ইতিহাসে 'ভয়াবহতম গনহত্যাগুলোর একটি' হিসেবে ঘোষনা করর জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহবান

৪. জাতিসংঘে পাকিস্তান সরকারকে এজন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা

৩ ও ৪ এর জন্য কি করতে হবে?
ক. বিদেশী মিডিয়ায় যত বেশী পারা যায় চিঠি/সেমিনার এসবের মাধ্যমে বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরা।

৫. টোটাল কয়াজুয়ালটির ক্ষতিপূরণ দেয়া (আমার রাফ হিসেবে এটা হওয়া উচিৎ অন্তত ৩ লক্ষ কোটি টাকা ... বাংলাদেশ সরকারের পাঁচ বছরের মিনিমাম বাজেট), এবং অবশ্যই তা বর্তমান পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশকে দেবে।

৫ এর জন্য কি করতে হবে?
ক. আন্তর্জাতিকভাবে বাঙালী যারা প্রতিষ্ঠিত আছেন তারা পৃথিবীর সম্ভব সব আদালতে মামলা করবেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে

(X দফা নাম দেয়া হয়েছে কারণ আপনার তোলা দাবীগুলোও এখানে যোগ করা হবে, কাজেই মোট কতগুলো দাবী তা এখনও বলতে পারছিনা।)

প্রয়োজনীয় লিংক:

১. গিনেস বুক অভ রেকর্ডস, ২০০৭, পৃ: ১১৮-১১৯ (এখানে ৭১ এর পাকিস্তানি সেনা দ্বারা বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে পৃথিবীর ইতিহাসের 'ভয়াবহতম ৫টি গণহত্যার ১ টি' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কৃতজ্ঞতা: ব্লগার রাগীব)

২. http://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh_Liberation_Warhttp://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh_Liberation_War (উইকিপিডিয়ায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।
কৃতজ্ঞতা: ব্লগার রাগীব)

৩. http://gendercide.org/case_bangladesh.html (৭১ এর গণহত্যার পরিসংখ্যান।
কৃতজ্ঞতা: ব্লগার হাসান মোরশেদ )



২০০৭-০৪-২৯

আকৃতিসর্বস্ব মে দিবস !!

১.
বাংলাদেশে প্রতি বছর মে দিবস পালন হয়;
সরকারী ছুটি থাকে;
অনেক জায়গায় সেমিনারের আয়োজন হয়।
সেমিনারে নামী-দামী লোকজন বাণী দেন।
পত্রিকায় বিশাল বিশাল সম্পাদকীয়/কলাম ছাপা হয়।
রাস্তায় হয়ত মাথায় ব্যানার-ফেস্টুন বেঁধে Rally হয়।
আমরা মহান মে দিবসকে স্মরণ করি, শ্রমিককে মর্যাদা দেই।
গুগল আর্থ দিয়ে নিচে তাকিয়ে ডেখলে মনে হয়, কি চমৎকার!!

২.
জাপানীরা মে দিবস কি জানেওনা।
ছুটি তো দূরের কথা। হয়ত রাজধানীর কোন এক কোণায় ছোট কোন সেমিনার হয়, অথবা হয়না।
পত্রিকা তন্নতন্ন করে ঘাঁটলেও কিছু পাওয়া যাবেনা।
কি অসভ্য জাতি!!

৩.
আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিকরা গড়ে কোম্পানীর জন্য বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার কাজ করে দেন।
তারা বছরে বেতন পান বিশ হাজার!! পঁচিশ হাজার!!
গড়ে বিশ ভাগের একভাগ।
সেমিনার বক্তাদের ঘরে 'সকালে-ঘুম-থেকে-উঠে-রাতে-ঘুমাতে-যাওয়া-পর্যন্ত' ফুলটাইম কাজ করে কাজের মেয়েরা; এরা যে বেতন পায় তার চেয়ে মালিকের আদরের পুত্র/কন্যার খাতার স্টিকার কেনায় বেশী টাকা খরচ হয়।
পত্রিকার অফিসের চা আনা নেয়া করে যে পিওনটা, তার বেতনও তেমন।
Rally শেষে দুইঘন্টা হাঁটা টোকাইটাকে একটা ডালপুরী আর এককাপ চা খাইয়ে বিদেয় করা হয়।

কি আসে যায়, আমরা তো মে দিবস পালন করি।

৪.
জাপানের সব কোম্পানীতেই মোটামুটি এক। যেমন, সনিতে একজন শ্রমিক বছরে দেড় কোটি টাকার সমমানের সার্ভিস দেন।
তার বেতন হয় সব মিলিয়ে ত্রিশ লাখের মতো। পাঁচ ভাগের একভাগ।
তিন বছর কাজ করা শ্রমিক আর এন্ট্রি-লেভেল ইঞ্জিনিয়ারের আয় সমান।
অফিস শেষে পোশাক বদলে দুজন যখন ট্রেনে চাপে, কারও সাধ্য নেই মুখ দেখে বলা, কে শারীরিক শ্রম করে, আর কে মাথার শ্রম করে।

তবু শালারা মে দিবস পালন করেনা।

৫.
শেইপ বা আকৃতিটা যখন মূখ্য হয়ে যায়, তখন গুনগত মানের বালাই থাকেনা।

২০০৭-০৫-০১

কত অপমান করেছি তোমাদের, মা!

১.
গতবার দেশে গিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম। মূল বিষয় ছিল, বাসার সবাইকে নিয়ে একদিন পুরো বাইরে খাওয়া।
পুরো সফল হইনি, কারণ সকালের নাস্তাটা কোনভাবেই বাইরে করানো যায়নি।
যাই হোক লাঞ্চটা সারলাম বসুন্ধরা সিটির ৮ তলায় ফুড কোর্টে। দাম কিন্তু ঢাকার সাধারণ মানের রেস্তোরাগুলোর (যেখানে অন্তত পরিচ্ছন্ন খাবার আছে বলেই মনে হয়) মতই। সবাই একটা করে চিকেন/মাটন/বীফ আইটেম, ভাত, কিছু সালাদ আর ড্রিংকস নিলাম। বিল আসল ১৬০০ টাকা। ওহ, আমরা সদস্য ছিলাম ৮ জন।
বিকেলে একটু ঘুরাঘুরি করে একটি সাধারণ ফাস্টফুড শপে ঢুকে লাইট কিছু খাবার (কেউ ঝাল, কেউ মিস্টি) খেলাম, সাথে চা/কফি/লাসসি। মোটামুটি ৪০০ টাকা বেরিয়ে গেল।
রাতে 'ভূত' নামে একটা রেস্তোরায় খেলাম, সাধারণ আইটেম। দামবেশী দেখে সবাই পেট না ভরলেও পেট ভরেছে ভাব করে উঠে আসল। এখানে বিল পড়েছিল ২৫০০ টাকার মতো।
ধরে নিলাম সকালে নাস্তাটা একসাথে করলে আরও ৫০০ টাকা যেত।
একদিন সবাই বাইরে খেলে খরচ হয় ৫০০০ টাকা।
একমাসে দেড় লাখ টাকা!!

২.
আমরা বাসায় যখন খাই, তখন এর চেয়ে ভাল খাই। হয়ত তেলটা একূ কম দেয়া থাকে খাবারে, কিন্তু ভ্যারাইটি/স্বাদ দুইদিক থেকেই বিচার করে দেখলে বলা যায় যে বাসার খাবার অনেক বেটার।
তারপর চা-টা খাওয়া হয় অনেকবার। ফলমুলও কমবেশী খাওয়া হয় বাসায়।
এবং সবচেয়ে বড় কথা খাবারের মান বাসার মতো একইরকম রাখতে গেলে বাইরে খাওয়ার সময় উপরে লেখা একটু দামী জায়গায় খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। (তাও আমার ধারনা উপরের খাবারের হিসেবটা বিলাসিতা না, বিলাসিতা করলে ঢাকায় একদিনে ৮ জন মিলে ২০-২৫ হাজার খরচ করা যায়)

মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে বাসার খাওয়া খরচ ১০ থেকে ১২ হাজারে হয়ে যায়। আরও কমেও নাকি হয়!!
মায়ের এসিস্ট্যান্ট কাজের মেয়েটাকে বেতন দেয়া হয় ৩ হাজারের মতো।
আচ্ছা, সবমিলিয়ে খরচ কোনভাবেই ১৫ হাজার ক্রস করেনা।

সাধারণ এ্যাকাউন্টিং অনুযায়ী সংসারে মার 'শেফ' হিসেবে অবদান কত?
১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা!!
মা কিন্তু শুধু শেফই না, আরও অনেক অনেক কাজ করে।

প্রতি বছর একটা জরিপ হয় যুক্তরাস্ট্রে, একজন গৃহিনী কতটাকা সমসমূল্যের শ্রম দেন তা নিয়ে। এবছর তা হলো ১ লাখ ৩৫ হাজার ডলার!!

৩.
ছোটবেলায় মনে আছে-- জামা ছিঁড়ে গেল, দৌড়ে যাও মায়ের কাছে। সাথে সাথে ঠিক করে দেবে।
খেলতে গিয়ে হাঁটু ছিলে গেছে? অথবা রাতে জ্বর এসেছে? অথবা বদহজমে বমি হয়েছে? মা তো আছেই, সেইতো সবচেয়ে ভাল জানে তখন আমার কি দরকার।
বাসার প্রত্যেকটা সদস্য, এমনকি বাবাও, সবকিছুর জন্য মার দিকে চেয়ে আছে। যেন এই দেবী মুহূর্তে সবার সবসমস্যা সমাধান করে দেবে।
আমার কি প্রয়োজন, সেটা অনেক সময় মুখ ফুটে বলতে না পারলেও মুচকি হেসে মা ঠিকই বুঝে নেয়। মনখারাপ হলে মনভালো করার জন্য বাচ্চার কাছে মায়ের চেয়ে ভাল আশ্রয় আর কি?
একজন মা একাধারে শেফ, ম্যানেজার, কাউন্সেলার, টিচার, টেইলার, ফার্সট এইডার, প্ল্যানার -- কতকিছু। একজন মা রবীন্দ্রনাথের চেয়ে কম কি? রবীন্দ্রনাথের গড়ে উঠাওতো একজন মায়ের অবদান।

৪.
এইসব মায়েদের মাঝে একগ্রুপ আছেন যারা একই সাথে বাইরেও চাকুরী করেন, ঘরেও দেখেন।
আবার একগ্রুপ আছেন যারা শুধু ঘরটাকেই দেখেন। এরা এখনও সংখ্যায় অনেক বেশী।

এদের জন্যই বলছি।

সভ্যতা এদেরকে 'গ্রান্টেড ফর' ধরে নিয়েছে।
সভ্যতা এদেরকে স্বীকৃতি দেয়না।
এইসব মায়েদের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলা হয়, 'দেখো নারী জাতি পিছিয়ে আছে!!'
এদেরকে নিয়ে সাহিত্যে, টিভিতে, নাটকে হ্যারাস করা হয় সবচেয়ে বেশী -- মাঝেমাঝে অপমান, মাঝেমাঝে ব্যাঙ্গ।
এবং, আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এদের সন্মানের পক্ষে এদের অবদান স্বীকার করে কেউ কোন কথাও বলেনা!!

আমি এসব দেখলে ভাবি, আমার মা কিভাবে এসব হজম করছে, সে কেনো প্রতিবাদ করতে পারছেনা!
কারণ আমি তো জানি আমার সেই "সহজ-সরল" আটপৌরে মা'র শক্তি কতখানি!!

কিন্তু আমি জানি কেন তাঁদের সন্মান দেয়া হয়না।
কারণ, এই পুঁজিবাদী সমাজে তাঁদের হাতে সরাসরি অর্থ আসেনা!!!

৫.
একটা প্রস্তাব!!!!!

আজ হয়ত অনেকেই প্রস্টাবটা শুনে হাসবেন, তবে এই মেলশভেনিস্ট সোসাইটিতে যেদিন অনেক পুরুষেরা স্টে-এট-হোম হিসেবে কাজ করবে, তখন দেখবেন এই প্রস্টাব এমনেই পাস হয়ে গেছে।

প্রস্তাবের পক্ষে ভূমিকাটা হলো,
এই যে মায়েরা সরকারের জন্য, কর্পোরেটদের জন্য এরকম যোগ্য যোগ্য মেশিন বানিয়ে দিচ্ছে নিজের সবটুকু বিসর্জন দিয়ে, সেই মায়েদের কি সরকারের বা কর্পোরেটদের লাভ্যাংশে অধিকার নেই?
চিন্তা করুন, হঠাৎ সব গৃহিনী মায়েরা যদি সিদ্ধান্ত নেন যে আগামী ১৫ বছর কেউ বাচ্চার কেয়ার নেবেননা, তাহলে কর্পোরেটগুলো ঝরে পড়বে।

তাই প্রস্তাবটা হলো,
গৃহিনীদের জন্য রাস্ট্রীয় ভাতা-ব্যাবস্থা চালু করা। সন্তান যত ভাল করবে, তার সাথে সাথে এই ভাতার পরিমাণ বাড়বে। এবং এজন্য ট্যাক্স হিসেবে কর্পোরেটরা সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেবে।


সহজিয়া দর্শন - ১

[ছুটির দিন, কাজকাম নাই; একটু দর্শন কপচাই; উচ্চমার্গের কিছু খুঁজিলে, এখানে ঢুইকা লাভ নাই]

ইউনিভার্সিটি লাইফে বিভিন্ন দেশের(বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড) বন্ধুরা মিলে একটা ক্রিকেট ক্লাব করেছিলাম;
ছুটির দিনে সবাই একসাথে খেলতাম, গালগল্প করতাম
অস্ট্রেলিয়ান একবন্ধু ছিল, নাম টিম; ভাল বোলার-ব্যাটসম্যান
আমি নামতাম শেষের দিকে, হাতে স্ট্রোক ছিল, দুচারটা চার-ছয় মেরে অনসাইডে ক্যাচ দিয়ে ফিরতাম

তো একবার আমাদের দলের ছয় উইকেট পড়ে গেল ধুপধাপ করে; নামলাম ব্যাট করতে
ক্রিজে তখন টিম, আমাদের অনেক রান করতে হবে তখনও
আমার পরে বাকী যারা আছে তারা প্রতিম্যাচেই ব্যাট কিভাবে ধরতে হয় এব্যাপারটাতে ধাতস্থ হতে হতেই আউট হয়ে যায় - এমন টাইপের
কাজেই, আমার ঠুসঠাস আউট হওয়া চলবেনা!!

টিম এসে আমাকে বলল, 'বল-বাই-বল খেল মোট কত রান নিবা সেটা ভাবার দরকার নেই, যাস্ট ভাব যে পরের বলটা টিকে থাকব, লুজ বল হলে রান নিব পরের বল গেলে, এর পরের বল নিয়েও একই চিন্তা কর'
একদম সেইভাবে খেললাম, সব মনোযোগ শুধু পরের বলটার প্রতি
আমার সাধারণত ১০-১২ বলের বেশী খেলা হতোনা, সেদিন ৩৫ বল খেললাম
লাইফের একমাত্র ফিফটিও সেদিন আসল

খেলাশেষে হয় খেলার পর্যালোচনা; আমি রীতিমতো টিমের মন্ত্রে মুগ্ধ
ব্যাপারটা নিয়ে এটাসেটা বলছি
হঠাৎ টিম ামাকে বলল, 'ম্যান, লাইফ ইটসেলফ ইজ লাইক দ্যাট; শুধু আগামীকালের দিকে ফোকাস কর, আগামী বছর কি হবে টা নিয়ে এখনই এত ভাবার কিছু নেই, আগামীকালগুলো ভাল হলে আগামীবছরটা এমনেই ভাল হবে'
আমার মুগ্ধতা বেড়েই চলল
বললাম,'কোথায় শিখেছ এত চমৎকার দর্শন?'
সে বলল, 'আমার স্কুলে এক চমৎকার শিক্ষক ছিলেন'

ওদের স্কুলিং সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানলাম; মনে হলো খুব জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো শিখে আমাদের মতো 'ভবিষ্যতে হ্যান হয়ে ফাটাইয়া ফেলব, ত্যান করে উড়াইয়া ফেলব' - এসব শিখেনা খুব কাছের বিষয়গুলোতে ফোকাস থাকে, বাচ্চারা ক্লাসে যা শেখে নিজের জীবনে তা দেখতে পায় সরাসরি

জাপানে বাচ্চারা প্রত্যেক ক্লাসে অন্তত একবার নিজের বাবার উপরে একটা, মায়ের উপরে একটা লেখা লেখে
আমাদের দেশে রচনার বিচারে হয়ত লেখাগুলো খুবই সাধারণ মানের, ১০ এ ৩ ও পাবেনা

কিন্তু তাতে কি?

হরলাল রায়ের বই থেকে 'মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য' কোটেশানসহ মুখস্থ করার চেয়ে নিজের-আরও-অনেক-ঘনিষ্ট বাবা-মা সম্পর্কে নিজে থেকে দু-চারলাইন লিখলেই বরং নিজের বাবা-মার প্রতি সন্মানটা অনেক বাড়ে